Nothing concerns you more than the safety of your child – and getting them vaccinated on time will help in protecting her or him against various diseases.
Read more in Bengali
সন্তানের জন্মের পর সব মা-বাবাই লক্ষ করবেন যে, ডাক্তারবাবু একগাদা টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু মা-বাবাদের মনে হতেই পারে যে এত টিকার দরকারটা কোথায়? শুধু শুধু এত টিকা নিয়ে বাচ্চার লাভটাই বা কী হবে? তার থেকে বরং কিছু টিকা বাদ দিলেও ক্ষতি নেই!
প্রথমেই এই প্রসঙ্গে বলে রাখি যে, আপনার বাচ্চার জন্মের পর ডাক্তারবাবু যে টিকাগুলো নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, তা অত্যন্ত জরুরি এবং অপরিহার্য। যাতে বাচ্চা রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকে। আর রোগ সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়তে পারে। কিন্তু সমস্যাটা এখানেই! বেশির ভাগ অভিভাবকেরই এই বিষয়ে একটা গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যায়। আর এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানটা জানলে অবাকই হতে হয়! প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের টিকাকরণ হয় না। আর প্রতি বছর ডিপথেরিয়া, হাম, টিটেনাসের মতো রোগে প্রায় ১৫ লক্ষ শিশু মারা যায়। শুধু তা-ই নয়, হেপাটাইটিসের মতো রোগ থেকে সুরক্ষিত নয় লক্ষ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্কও!
ফলে বুঝতেই পারছেন, নিজের সন্তানের স্বার্থে টিকাকরণ কতটা জরুরি। প্রত্যেক মা-ই চায়, নিজের সন্তানকে সুস্থ ও সুন্দর একটা জীবন দিতে। সন্তান যাতে সব থেকে ভালটা পায়, সে দিকেই সব সময় বাবা-মায়ের কড়া নজর। তাই সন্তানকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে রোগ থেকে সুরক্ষিত করবেন সবার আগে। এ ভাবেই তাকে তার জীবনের সব থেকে বড় উপহারটা আপনিই দিতে পারবেন!
আর এর জন্য দরকার সঠিক সময়ে সঠিক টিকাকরণ। জেনে নিন, টিকাকরণ আপনার সন্তানের জন্য অপরিহার্য কেন?
টিকাকরণ আপনার সন্তানের সুরক্ষা কবচ:
আগে বহু রোগের কোনও ওষুধ অথবা টিকা ছিল না। ফলে সেই সব রোগ বহু শিশুর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু আমরা সে দিক থেকে বেশ ভাগ্যবান! কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞান আগের থেকে অনেক উন্নত। ফলে আগে যে সব রোগে মানুষ মারা যেত, সেই সব ভয়াবহ রোগ থেকে আমরা পুরোপুরি সুরক্ষিত। আর তার মূল কারণটাই হল সেই রোগের সঠিক টিকা আবিষ্কার। যেমন, আগে পোলিও রোগ একটা বড় সমস্যার কারণ থাকলেও এখন সঠিক টিকাকরণ হলে কিন্তু শিশুকে পোলিও রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
টিকা নিরাপদ ও কার্যকরী:
গবেষক, বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তারদের বারংবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই টিকা বাজারে ছাড়া হয়। এমনকী প্রয়োগের পরে এর কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কি না, সেই বিষয়েও নজর রাখা হয়। এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেই ব্যবহারের জন্য ছাড়া পায় টিকা। বাচ্চাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় ব্যথা হতে পারে। ইঞ্জেকশন ফোটানো জায়গাটি লাল হয়ে ফুলে যেতেও পারে। তবে এই ভ্যাকসিনগুলি যে সব রোগ প্রতিরোধ করে, সেই সব রোগের জ্বালা যন্ত্রণার তুলনায় কিন্তু টিকা নেওয়ার যন্ত্রণা অনেকটাই কম। আর টিকাকরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও খুবই বিরল।
টিকাকরণ আপনার সময় ও টাকা বাঁচাবে:
টিকাকরণে প্রতিরোধ করা যায়, এমন রোগ হলে তার স্কুল তো কামাই হবেই। আর তাকে নিয়ে ছোটাছুটি করতে আপনারও কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এমনকী এই ধরনের রোগ দীর্ঘস্থায়ীও হয়। সে ক্ষেত্রে আর্থিক দিকটা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা করতে হয়। তাই আমরা যেমন টাকা-পয়সা অনেক ভেবে-চিন্তে বিনিয়োগ করে থাকি, টিকাকরণের ক্ষেত্রেও ঠিক সে রকমই। নিজের এবং সন্তানের জন্য না-হয় টিকাকরণেই বিনিয়োগ করবেন।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাবে টিকাকরণই:
এই যেমন আমাদের কয়েক প্রজন্ম আগেও যে রোগগুলিতে শিশুরা মারা যেত অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে যেত, সেই সব রোগগুলিকে টিকার মাধ্যমে একেবারেই কমিয়ে ফেলা হয়েছে। এমনকী সারা বিশ্বেই কিছু কিছু রোগ তো এই টিকার জন্য বিলুপ্ত হয়েছে। যেমন জলবসন্তের কথাই ধরা যাক। এখন কি কোনও শিশু জলবসন্তে আক্রান্ত হয়? একেবারেই নয়। কারণ সারা বিশ্ব থেকেই এই রোগ একেবারেই মুছে গিয়েছে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে টিকাকরণের জন্যই। আবার ধরা যাক রুবেলা রোগের কথাই। গর্ভবতী মায়ের থেকেই ভ্রূণে অথবা সদ্যোজাত শিশুর মধ্যে এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। আর টিকাকরণের মাধ্যমেই সেই ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। এখন থেকেই অভিভাবকেরা যদি ব্যাপক হারে সঠিক টিকাকরণ শুরু করেন, তা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিন্তু সুরক্ষিত থাকবে।
আপনার প্রিয়জনের জন্যও টিকাকরণ জরুরি:
অনেক ক্ষেত্রে একেবারে ছোট শিশুরাও ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়, এমন রোগে আক্রান্ত হয়। মানে টিকাকরণের উপযুক্ত বয়স হয়নি তাদের। আবার অনেকের মারাত্মক অ্যালার্জি, লিউকেমিয়ার মতো রোগ থাকলে তাদের টিকাকরণ সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাদের নিরাপদে রাখার দায়িত্বও কিন্তু আপনার। কী ভাবে? আপনার ও আপনার সন্তানের টিকা নেওয়া রয়েছে। ফলে আপনাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভাল। তাই ওই ধরনের রোগ আপনাদের থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। এতে আপনার পরিবার ও প্রিয়জনরাও সুরক্ষিত থাকবে।
এ বার আসি আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির কথায়। আমরা কোভিড ১৯-এর মতো মহামারির সঙ্গে লড়াই করে চলেছি। স্বাভাবিক জনজীবনও ব্যাহত। আমরা কেউই জানি না যে, কবে ছন্দে ফিরব আমরা। আর এই মহামারির কোনও ওষুধই আবিষ্কার করা হয়নি এখনও পর্যন্ত। তার জন্য পরিশ্রম করে চলেছেন গবেষকেরা। আর এর টিকা বেরোতেও যথেষ্ট সময় লাগবে বলেই মত গবেষকদের। তাই যত ক্ষণ না এই করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কৃত হচ্ছে, তত দিন কিন্তু আমাদের ইমিউনিটি বুস্টিং বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা মাথায় রাখতে হবে। না হলে কিন্তু এই ভাইরাসের সঙ্গে যুঝতে পারব না। আর শিশুদের ক্ষেত্রেও এই দিকটা নজরে রাখতে হবে। কারণ দেখা যায়, আজকাল বহু শিশুরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
আসলে এখন ফার্স্ট লাইফের যুগ। আর তার জাঁতাকলে পড়ে পিষছে শিশুরাও। আগেকার দিনের মতো খেলাধূলা বা বিকেলে বাইরে ঘুরতে বেরোনো প্রায় হয়ই না তাদের। বাড়িতে চার দেওয়ালের মধ্যেই ভিডিও গেম অথবা কম্পিউটার গেম, কার্টুনেই মজে থাকে আজকালকার বাচ্চারা। শরীরচর্চা সে ভাবে হয় না। তার পর পড়ার চাপ, নাচ-গান-ক্যারাটে-আঁকা শেখার চাপতো আছেই। ফলে মনের উপর চাপ বোঝার মতো বাড়তে থাকে খুব ছোট বয়স থেকেই। আর এগুলোরই প্রভাব ফেলে ওদের ইমিউনিটিতে। আসলে সন্তানকে বেস্ট লাইফস্টাইল দিতে গিয়ে আমরা মা-বাবারাই কিন্তু তাদের জীবনে বিপদ ডেকে আনছি অজান্তেই। তাই বাচ্চাদের জন্য সঠিক টিকাকরণের সঙ্গে সঙ্গে ইমিউনিটি বুস্টিংও অত্যন্ত জরুরি।