Worried over having a baby after testing positive for HIV? IVF can be a safe and effective way of choosing parenthood.
Read more in Bengali
এটা গত বছরের কথা| ডিসেম্বর নাগাদ আমার চেম্বারে দেখাতে এসেছিলেন এক চাকুরিরতা মহিলা ও তার হাসব্যান্ড। বিয়ের পর দীর্ঘদিন কেটে যাওয়ার পরও সন্তানধারণ করতে পারেননি তিনি। তবুও একবার মা ডাক শোনার আশায় চেম্বারে এসেছিলেন তিনি।
গোটা ব্যাপারটা শুনে প্রথমেই কয়েকটা পরীক্ষা করতে দিয়েছিলাম। রিপোর্ট আসার পর দেখা গেল যে ওর হাসব্যান্ড এইচ আই ভি পসিটিভ। তারপর বেশ কেয়েকদিন ওদের সাড়া শব্দ না পাওয়ার পর এবছর শুরুতে অবশ্য, মেয়েটি ফেরত এলো| এইবার একাই এলো| জানালো যে প্রথমে অনেকটা সময় লেগেছিলো দুঃসংবাদটি মেনে নিজেদের সামলাতে|
ওর হাসব্যান্ড চেয়েছিল দত্তক নিতে| সাময়িক স্বস্তি পেয়েছিল মেয়েটি সেইটা শুনে। কিন্তু অন্যদিকে ওর সব ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন এক এক করে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। বরাবরের ইচ্ছে ছিল নিজের গর্ভে সন্তান ধরবে কিনা| তাই আরেকবার চেষ্টা করতে চাইলো, জানতে চাইল কোনো উপায় আছে কিনা| আমি ওকে আশ্বাস দিলাম, জানালাম উপায় আছে| ওর কেসে সব থেকে কার্যকরী আই ভি এফ-ই হবে দেখে, এগোতে শুরু করলাম| এবং, একটু আর্শ্চয্য হলাম যখন দেখলাম প্রথম বারেই ও কন্সিভ করলো| এখন ওরা একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা বাবা|
এইচআইভি পজিটিভ হলে
আপনাদের বলি যে দম্পতির একজন এইচ আই ভি পসিটিভ মানে এই নয় যে স্বাভাবিক ভাবে গর্ভধারণ করা অসম্ভব| তবে জানা দরকার যে আপনার সঙ্গীর ভাইরাল লোড কতটা| তার সাথে আপনাদের এটাও জানতে হবে উনি অন্যান্য কোনো ইনফেকশন থেকেও ভুগছেন কিনা| উনি যদি কোনো ইনফেকশন থেকে না ভোগেন ও নিয়মিত হার্ট – হাই অ্যাক্টিভ অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি, তবে অসুরক্ষিত যৌন মিলনে এইচ আই ভি সংক্রমণের ঝুঁকি কম| তবে, অসুরক্ষিত যৌন মিলন শুধু মাত্র ওভুলেশন পিরিয়ড-এর জন্য| ডাক্তারি ভাষায় আমরা এটাকে টাইমড ইন্টারকোর্স বলে থাকি| কিন্তু আপনি যদি একেববারেই সংক্রমণের সম্ভবনা এড়াতে চান, তবে ফার্টিলিটি স্পেশালিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী আই ভি এফ বা ইকসি করতে পারেন|
এইচআইভি ভাইরাস মানেই এডস নয়
আপনার বা কারোর রক্তে এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া গেলেই যে আপনি বা সে এডসে আক্রান্ত তা কিন্তু নয়। এডস তখনই হয়, যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে নানা রোগ বাসা বাঁধতে থাকে।
অসুখটা কী
এডস-এর ভাইরাসটি হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস যা শ্বেত রক্তকণিকার সিডি-৪ লিম্ফোসাইট কোষকে খেয়ে ফেলে এবং তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তখন যে কোনও ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া সহজে বাসা বাঁধে। প্রথমে জ্বর, সর্দি কাশি ও পেট খারাপের মতো ছোটখাট অসুখ দিয়ে শুরু হয়। পরে জটিল রোগ বাসা বাঁধতে থাকে।
মূলত নিম্নলিখিত কয়েকটি উপায়ে এডস-এর ভাইরাস আমাদের শরীরে আসে,
১) অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গ
২) ড্রাগ নেওয়ার সময়ে অন্যের ব্যাবরিত সূচ ব্যবহার করলে
৩) এইচআইভি পজিটিভ মানুষের রক্ত অন্যের শরীরে দেওয়া হলে
ভাইরাসের উপস্থিতি টের পাওয়া
এইচআইভি প্রাথমিক পর্যায়ে বোঝা যায় না এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যায় । তাই প্রত্যেকেকে এর লক্ষণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
- ক্লান্তি
যদি একজন ব্যক্তি সবসময় ক্লান্তি অনুভব করেন তবে এটিকে গুরুত্ব দিয়ে এইচআইভি পরীক্ষা করা উচিত।
- পেশী প্রসারণ
কঠিন শারীরিক কাজ না করেই আপনার পেশীতে যদি অস্বস্তি হয়, এটাকে অবহেলা করবেন না। এটি এইচআইভি-র একটি লক্ষণ হতে পারে।
- জয়েন্ট ব্যথা এবং ফোলা ভাব
বয়সের জন্য জয়েন্টগুলোতে ব্যথা এবং ফোলা ভাব স্বাভাবিক, তবে নির্দিষ্ট বয়সের আগেই জয়েন্ট ব্যথা এবং ফোলা হয় তবে হালকাভাবে নেবেন না কারণ এটি এইচআইভির লক্ষণ হতে পারে।
- ওজন কমে যাওয়া
একজন এইচআইভি রোগীর ওজন প্রতিদিন হ্রাস পায়। যদি আপনার কোনও প্রচেষ্টা ছাড়াই ওজন কমতে থাকে তবে সতর্ক হবেন। শুকনো কাশি এবং বমি বমি ভাব
- ক্রমাগত শুকনো কাশি এবং বমি বমি ভাব
ক্রমাগত কাশি কিন্তু কাশিতে রক্ত নেই। সর্বদা মুখ ব্যথা, খাওয়ার পরে বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব এইচআইভির লক্ষণ হতে পারে।
- ঠাণ্ডা লাগা
ঠান্ডা লাগতেই পারে কিন্তু যদি স্বাভাবিক আবহাওয়াতেও চট করে ঠান্ডা লেগে যায় তবে এটি এইচআইভির লক্ষণ হতে পারে।
- ঘুমানোর সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
যে কোনও তাপমাত্রায় যদি ঘুমের সময় ঘাম হতে থাকলে এটি এইডস এর লক্ষণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বা জন্মের পর এইচ আই ভি আক্রান্ত মায়ের কি কি ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত
মহিলাদের দেহে এইচ আই ভি ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করার মাধ্যমে শিশুকে সংক্রমনের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। ঠিক সময়ে পরীক্ষা করিয়ে ঠিক ঠাক সিদ্ধান্ত নিয়ে মহিলারা অনেক বেশী সুরক্ষিত থাকে। গর্ভাবতী মহিলাদের যেগুলি জানা উচিত তা হল:
- সঠিক চিকিৎসা ও ওসুধ বাচ্ছার মধ্যে সংক্রমণের সম্ভবনা কমতে পারে।
- নতুন মায়েদের জানতে হবে কিভাবে খাওয়ালে সে এইচ আই ভি থেকে মুক্তি পেয়ে সুস্থভাবে বাঁচতে পারে।
- এইচ আই ভি যুক্ত মায়েদের গর্ভাবস্থায় ওসুধ ব্যবহার করা একান্ত প্রয়োজন কারণ যারা করেন না তাদের প্রায় ১/৩ অংশের বাচ্ছা এইচ আই ভি নিয়ে জন্মায় এবং ২/৩ অংশ বাচ্ছা ৫ বছরের মধ্যে মারা যায়।
সব শেষে বলি যে এইচ আই ভি মানেই যে মা বাবা হওয়ার সুখ অনুভব করতে পারবেন না – এমন নয়. কাজেই আগে থাকতে ভয় পাবেন না আর হাল ছেড়ে দেবেন না