Non-smokers Are Also At Risk Of Lung Cancer!

Lung cancer is no longer a smoker’s disease. Passive smoking, air pollution & other factors are to blame for the increasing number of cases in non-smokers.

Read more in Bengali

২৮ বছরের প্রিয়াঙ্কা পেশায় অ্যাডভারটাইজিং সংস্থার কর্মী৷ দক্ষিণ কলকাতার নামকরা এক বেসরকারি হাসপাতালে রক্তবমি নিয়ে ভর্তি হয়েছে এই এক সপ্তাহ আগে৷ তরুণীর  বাবাও মারা গিয়েছিলেন ২০১৬ সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে| বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে, ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত এই স্মোকার|

শিপ্রা সেন ৫০ বছরের এক গৃহবধূ৷ খুসখুসে কাশি হয়েছিল আগের বছরের গোড়ায়| নানা ওষুধে কাজ না-হওয়ায় ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হন তিনি৷ ধরা পড়ে, ফার্স্ট স্টেজ ফুসফুসের ক্যান্সার৷ অথচ, ধূমপান দূরস্থান, কোনো দিন তামাকজাতীয় কোনও বস্তুও ছুঁয়েই দেখেননি তিনি৷ পরে জানা গেল যে ওনার স্বামী নিয়মিত ধূমপান করেন| অধিকাংশ সময় বাড়িতেই ধূমপান করেন তিনি|

বছর পঁয়ত্রিশের এক তরুণ | পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী৷ গত চার সপ্তাহ আগে থেকে বেশ কাশি হচ্ছে এই নন স্মোকারের অথচ ঠান্ডা ও লেগে নেই||চেস্ট এক্সরেতেই ধরা পড়লো ফুসফুসের ক্যান্সার| অদ্ভুত ব্যাপার যে কখনই সিগারেট ছুঁয়ে দেখেনি বা বাড়ির কাউকেই ছোট থেকে সিগারেট খেতে দেখেনি|

ধূমপান করেন যে পুরুষেরা, তাদের মধ্যে ক্যান্সারের শীর্ষে যে রয়েছে ফুসফুস ক্যান্সার, তা জানা ছিল৷ কিন্তু আজকাল নন স্মোকাররাও এই অসুখের শিকার হচ্ছেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে| কারণ –  ধূমপান এবং পরিবেশ দূষণ৷ প্যাসিভ স্মোকিং যদি এর একটি কারণ হয়, তবে আর একটি কারণ অবশ্যই পরিবেশ দূষণ।

এই কয়েকদিন আগেই খবরের কাগজে পড়লাম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (এ কিউ আই) ২০০ মাত্রা ক্রস করে ফেলেছে | আর সেটির আরো অবনতি ঘটেছে দীপাবলির পর| রেডিওথেরাপিস্টরা বলছেন বায়ুদূষণের মাত্রা শহরে বহুগুণ বেড়েছে৷ কলকাতার বাতাসে যে ধূলিকণা ঘোরাফেরা করে, তার মধ্যে সালফারের উপস্থিতি বেশ বেশি৷ আর তা ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টির অন্যতম কারণ৷

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ৩৪.৬% প্রাপ্ত বয়ষ্কদের মধ্যে ৪৭.৯ % পুরুষ ও ২০.৩% নারী ধূমপান করেন | যথেষ্ট সচেতনতা থাকা সত্ত্বেও কলেজ ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেও ক্রমশই বেড়ে চলেছে ধূমপানের প্রবণতা রয়েছে যা যথেষ্ট উদ্বেগের৷

এই মারণরোগের বীজ রয়েছে মূলত তামাকের ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকারক নিকোটিন-সহ অন্যান্য উপাদানে। আসলে, বিড়ি বা সিগারেটের একটানে শরীরে যতটা নিকোটিন পৌঁছয়, তার বিষমাত্রার হারও অত্যন্ত বেশি। ফুসফুসের ক্যানসার ঠেকাতে এই অভ্যাস ত্যাগ অবশ্যকর্তব্য।

একথা অবশ্য ঠিক যে আজ ধূমপান করলে কালই ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবে সেরম কথা নেই৷ তবে পরিবারে ক্যান্সারের হিস্ট্রি থাকলে তার সঙ্গে স্মোকিং ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে এক ধাক্কায় অনেকটাe বাড়িয়ে তুলতে পারে| ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২৮ বছরের প্রিয়াঙ্কার ক্ষেত্রে৷

ধূমপান ত্যাগ তো করতেই হবে কিন্তু সেটি ছাড়াও নজর দিতে হবে কিছু খুঁটিনাটি দিকে| সেগুলি হলো:

  • ধূমপান বা তামাকজাত যে কোনও নেশা ছাড়ুন| প্রয়োজনে হলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিন।
  • নিজস্ব উদ্যোগে পরিবেশে গাছেদের উপস্থিতি বাড়ানোর প্রচেষ্টা করুন |
  • যতটা সম্ভব দূষণ এড়িয়ে থাকা যায় ততই ভাল| ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধী কোনও মাস্ক চিকিৎসকদের পরামর্শমতো ব্যবহার করতে পারেন, তবে মনে রাখবেন যে ভাইরাস-ব্যাকটিরিয়া ঠেকানো সম্ভব হলেও দূষণ পুরোপুরি ভাবে ঠেকানো যায় না।
  • মনে রাখবেন, এই অসুখ যদি এড়াতে চান তবে যে কোনও উপায়ে ফুসফুসে তামাকের ধোঁয়া যাওয়া প্রতিরোধ করতে হবে। কাজেই নিজে ধূমপান না করলেও যদি তামাকের ধোঁয়ার চারপাশেই থাকেন তবে সেই ভুল সংশোধন করে নিন আজই।
  • রেডন একটি নির্গন্ধ গ্যাস যেটা মাটির মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম ক্ষয় হওয়ার কারণe উৎপন্ন হয়। যারা ধূমপান করেন না তাদের ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার একটি মুখ্য কারণ এই রেডন গ্যাস| অক্সিজেনের সাথে এই গন্ধহীন গ্যাস মিলিত হয়ে শ্বাসে প্রবেশ করে ক্যান্সারের ঝুঁকির বাড়িয়ে তোলে| অতিরিক্ত যানচলাচলযুক্ত জায়গা বা কলকারখানার কাছে বাস করলে এই গ্যাসের মাত্রা প্রায় পরীক্ষা করা খুবই দরকার।

সাধারণ ভাবে একটানা কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত ওঠা, শ্বাসকষ্ট, বুকে-কাঁধে ব্যথা, হঠাৎ অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ক্লান্তি, খাবারে অনীহা হল ফুসফুসের ক্যানসারের চেনা কিছু উপসর্গ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সার যতক্ষণে ধরা পড়ে, ততক্ষণে দেখা যায় অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ তাই কাশি একটু বেশি দিন ধরে চললে টোটকায় সেটি কমবে এমন আশা না-করে অতি অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে ফেলবেন ৷ আর সব শেষে বলি, ‘ক্যানসার মারণ রোগ’ এই ধারণা ভুলে যান| ঠিকঠাক চিকিৎসা হলে ও নিয়ম মানলে রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে, রোগমুক্তিও হয় অনেক ক্ষেত্রেই।