Read on to know about Ishani’s journey to motherhood through IVF – a boon to every woman trying to achieve pregnancy.
Read more in Bengali
আমি ঈশানি দত্ত। আমার বয়স ৩১ বছর। কলকাতার এক বনেদি পরিবারের বৌ। বাবা মা’র এক মাত্র মেয়ে। আমার স্বামী অনির্বান, ওর বয়েস ৩৯। আমাদের বিয়ে হয়েছে ৮ বছর। গত ৫ বছর ধরে বাবা – মা হওয়ার চেষ্টা করছি। অনেকদিন পর সাফল্যও পেয়েছি, কিন্তু এই পথ চলাটা খুব কঠিন ছিল, আজ সেই গল্প শেয়ার করে নিতে চাই সবার সাথে।
৫ বছরের দীর্ঘ চেষ্টার পর, আমার এক বন্ধুর থেকে আই ভি এফ ক্লিনিক সম্পর্কে খোঁজ পেয়ে, আমার স্বামী অনির্বাণ ওখানে গেলেন। সেখানকার এক আই ভি এফ স্পেশালিস্টের কথাবার্তা, পরামর্শ, ইত্যাদি শুনে কিছুটা আশার আলো পেলাম।
ওনার নির্দেশেই আমার প্রথম ভ্রূণ প্রতিস্থাপন হয় আমার ৩০ বছরের জন্মদিনের কয়েকদিন পর। দিনটি ছিল ২৪ শে অক্টোবর ২০১৯। অন্যদের থেকে জানতে পারি আই ভি এফ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয় না কাজেই একটু ভয়ই করছিলাম।
নার্স যখন আমায় প্রস্তুত করছিল দেখলো আমি খুব চিন্তিত তখন জিজ্ঞাসা করলো: “তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত?” আমি জানতে চাইলাম আমার ভ্রূণটি জীবিত আছে কিনা! নার্স বললেন, “ঈশানি তুমি চিন্তা করোনা। তোমার ভ্রূণটি জীবিত না থাকলে সকালেই তোমায় জানানো হতো। সব ঠিক আছে এবং তাই আজকেই তোমার ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হবে।” শুনে খুব আনন্দ পেলাম।
আমার ভ্রূণ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়াটি সুন্দর ভাবে সমাপন হলো। সেই সময় আমার স্বামী অনির্বান আমার পাশে ছিল। আমরা ভ্রূণটির নাম দিলাম ‘সৃষ্টি’। একটি অনুভূতি নিয়ে আমি বাড়ি ফিরলাম। সৃষ্টি কে সঙ্গে পেয়ে একটা অসাধারণ অভিঙ্গতা হলো। প্রথম ২ সপ্তাহ আমাদের ভালোই কাটলো। মানসিক ভাবেও অনেকটা স্বাভাবিক হলাম।
২ সপ্তাহ পর পরিস্থিতিতা হঠাৎ যেন বদলে গেলো, অনির্বানের মায়ের হঠাৎ হার্টের সমস্যা ধরা পরে। সেই সময় খুব মানসিক দুর্বলতা চলছিল আমাদের দুজনেরই। ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের ৮ দিন পর আমি একদিন দেখলাম আমার ব্রেস্ট খুব শক্ত হয়ে রয়েছে আর খুব ব্যথা হচ্ছে। এই কথাটি প্রথম জানালাম আমার মা কে, বললাম ‘মা মনে হয় আমি প্রেগন্যান্ট। প্রেগন্যান্সি কিট কিনে এনে দেখার চেষ্টা করলাম সত্যিই প্রেগন্যান্ট কিনা। প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পসিটিভ এলো। সেকেন্ড লাইনটা হালকা হলেও আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম।
পরিবারের সবাইকে ইতিমধ্যে জানালাম যে আমি প্রেগন্যান্ট। আমাদের আই ভি এফ স্পেশালিস্ট কেও খবরটা দিলাম| উনি অবশ্য বললেন যে আরেকটিবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে কারণ রেজাল্ট অনেক সময়ে ভুল আসে। আরেকবার টেস্ট করলাম দেখলাম একই রেজাল্ট।
কদিন পর দেখলাম আমার ব্রেস্টে আবার নরমাল হয়ে গেছে। কি মনে হলো, আরেকবার প্রেগন্যান্সি কিট কিনে টেস্ট করলাম। এবার ফল এলো নেগেটিভ। একটু হতাশ হয়ে পড়লাম। নিজেকে খুব অসহায় লাগলো। কিছুটা সময় নিয়ে নিজেদের সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলাম তারপর আমরা আবার সেই আই ভি এফ ক্লিনিকে গেলাম পরবর্তী পদক্ষেপ জানার জন্যে।
আই ভি এফ স্পেশালিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী আরেকবার চেষ্টা শুরু করা হলো| আবার ভ্রূণ প্রতিস্থাপনও হল আগের মতো। কয়েক দিনের মধ্যে আমি জানতে পারলাম আমি প্রেগন্যান্ট। এবার আমি আর কিটের ওপর ভরসা না করে ফার্টিলিটি স্পেশালিস্টের কথামতো প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করলাম। রিপোর্ট এলো পসিটিভ। এর ৩৮ সপ্তাহ পর আমাদের পরিবারে এলো একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান আর বাবা – মা হলাম আমরা।
আই ভি এফ -এর মাধ্যমে আমি মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছি। তাই যে সকল দম্পতি আমার মতো সমস্যায় পড়েছেন তাদের বলব ধৈর্য্য ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর ভরসা রাখুন, সফলতা আসবেই।