There are several misconceptions regarding breastfeeding, which can make decision-making tough for new mommies. Here are a few myths you need to stop believing!
Read more in Bengali
খাবার অথবা জল ছাড়া কি আমরা বাঁচতে পারি? একেবারেই না। কিন্তু শিশুরা বেঁচে থাকতে পারে শুধু মাতৃদুগ্ধের উপর নির্ভর করে! জন্মের পর থেকে অন্তত ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধই হয়ে ওঠে তাদের রসদ। আর মাতৃদুগ্ধই তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে শুরু করে ইমিউনিটি – সব কিছুর জোগান দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে তাই মাতৃদুগ্ধই হল অমৃতসম! তবে অনেকেই মনে করেন যে, স্তন্যপান অত্যন্ত জটিল একটা বিষয়। তা কিন্তু একেবারেই নয়। কারণ স্তন্যপান নিয়ে বহু প্রচলিত ধারণা যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে, আর সেই ভুল ধারণাগুলো ভাঙার সময় এসে গিয়েছে। জেনে নিন, স্তন্যপান করানো সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা ঠিক, আর কোন ধারণা ভুল!
তত্ত্ব: শিশুর জন্মের পর মায়ের স্তনগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত প্রথম দুধ বা কলোস্ট্রাম ফেলে দেওয়া উচিত। কারণ এটি খারাপ।
তথ্য: কলোস্ট্রাম একেবারেই খারাপ বা শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং এটা অত্যন্ত উপকারী। এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা যে কোনও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। ফলে বুঝতেই পারছেন, কলোস্ট্রাম শিশুর ইমিউনিটি বাড়ায়। আসলে কলোস্ট্রাম অত্যন্ত পুষ্টিকর, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। তাই সন্তানের জন্মের একদম পরেই তা সন্তানকে দেওয়া উচিত। ধরে নিন, এটাই আপনার সন্তানের প্রথম ইমিউনিটি বুস্টার শট।
তত্ত্ব: সি-সেকশন ডেলিভারির পর স্তন্যপান একেবারেই সম্ভব নয়।
তথ্য: সি-সেকশন ডেলিভারির পর সন্তানকে স্তন্যপান সম্ভব। হয়তো প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হতে পারে। কারণ যত ক্ষণ না আপনার অ্যানাস্থেশিয়ার প্রভাব কাটছে, তত ক্ষণ আপনি স্তন্যদান শুরু করতে পারবেন না।
তত্ত্ব: ছোট স্তনে কম দুধ উৎপন্ন হয়।
তথ্য: বড় স্তনের মতো ছোট স্তন থেকেও সমান পরিমাণেই দুধ উৎপন্ন হয়। কারণ স্তনদুগ্ধের উৎপন্ন নির্ভর করে নিঃসরণকারী গ্রন্থির উপর, যা ছোট-বড় সব স্তনেই সমান সংখ্যায় থাকে। আসলে আপনার স্তনদুগ্ধের পরিমাণ নির্ভর করবে আপনার সন্তানের উপর। কী ভাবে? শিশুরা স্তনগ্রন্থি থেকে যত দুধ টানবে, তার উপরেই নির্ভর করে স্তনদুগ্ধের পরিমাণ। ওরা যত বেশি দুধ টানবে, তত বেশি পরিমাণে অক্সিটোসিন এবং প্রোল্যাকটিন হরমোন নিঃসৃত হবে। আর এই দুই হরমোনই স্তনদুগ্ধ তৈরি এবং সরবরাহে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
তত্ত্ব: স্তন্যপান করানোর সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের জলও খাওয়াতে হবে।
তথ্য: আসলে স্তনদুগ্ধ জলসমৃদ্ধ। ফলে শিশুদের স্তন্যপান করানো হলে স্তনদুগ্ধ থেকেই তারা পর্যাপ্ত জল পেয়ে যায়। তাই আলাদা করে তাদের আর জল খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। জল অথবা অন্য কোনও তরল সাপ্লিমেন্ট দিলে তা তাদের খিদে কমিয়ে দেবে, ফলে তারা স্তনদুগ্ধ আর পান করবে না। আর শিশু স্তন্যপান না করলে মায়ের স্তনে প্রোল্যাকটিন আর অক্সিটোসিন ক্ষরণ হবে না, যা মায়ের দুধ উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে দেবে।
তত্ত্ব: বাচ্চারা যদি স্তনদুগ্ধ পান না করে, তা হলে স্তনদুগ্ধ টক হয়ে যায়।
তথ্য: বাচ্চা স্তনদুগ্ধ পান করুক বা না-করুক মায়ের স্তনে সঞ্চিত দুধ সব সময়ই টাটকা থাকে। তবে স্তনদুগ্ধ বাইরে বার করে সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। কারণ স্তন থেকে বাইরে বার করা দুধ একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভাল থাকে।
তত্ত্ব: শিশুকে স্তন্যপান করানোর আগে সব সময় স্তনবৃন্ত পরিষ্কার করে নিতে হবে।
তথ্য: একেবারেই ভুল ধারণা। তবে আগে বলি, এই ভুল ধারণা কোথা থেকে এসেছে। অনেকেই মনে করেন, স্তনবৃন্ত পরিষ্কার না করলে সেখান থেকে শিশুর সংক্রমণ হতে পারে। এটা পুরো ভুল ধারণা। কারণ শিশুরা ইমিউনিটি পায় স্তনদুগ্ধ থেকেই। তবে স্তনবৃন্ত বারবার পরিষ্কার করা হলে ত্বকের ন্যাচারাল অয়েলস নষ্ট হয়, যার ফলে ত্বক শুকিয়ে ফেটে যেতে পারে।
তত্ত্ব: যদি শিশুদের ডায়েরিয়া অথবা গা-বমি ভাব থাকে, তখন তাদের স্তন্যপান করানো উচিত নয়।
তথ্য: একেবারেই ভুল ধারণা। কারণ যদি শিশুদের কোনও সংক্রমণ থাকে, সে ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধ থেকেই ওরা উপকার পাবে। অন্য খাবার বন্ধ করে দেওয়া হলেও স্তন্যপান করিয়ে যেতে হবে। তবে যদি স্তনদুগ্ধ পান করেই শিশু বমি করে ফেলে. সে ক্ষেত্রে স্তন্যপান বন্ধ রাখতে হবে।
তত্ত্ব: যে সব মায়েরা স্তন্যপান করান, তাঁদের বেশি করে গরুর দুধ খাওয়া উচিত। এতে তাঁর স্তনেও প্রচুর পরিমাণে দুধ তৈরি হবে।
তথ্য: দুধ খেলেই যে দুধ বেশি বেশি করে তৈরি হবে, এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়। যেটা সব থেকে বেশি প্রয়োজন, সেটা হল- শাকসবজিযুক্ত ডায়েট। সেই সঙ্গে ফল, শস্য ও প্রোটিনও থাকবে। আর এগুলোই আপনার স্তনদুগ্ধের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।
তত্ত্ব: বেশি বেশি দুধ উৎপাদন করার জন্য স্তনকে বিশ্রাম দিতে হয়।
তথ্য: এই ধারণা পুরোপুরি মিথ্যে। স্তনকে বিশ্রাম দিলে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। এটা আপনার স্তনে দুধ সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে। আসলে সঞ্চিত দুধের আধার হিসেবে কাজ করে স্তন। আর যত তাড়াতাড়ি তা খালি হয়ে হয়, তত তাড়াতাড়ি আবার তা ভর্তি হয়ে যায়। অনেক সময় ধরে স্তন পূর্ণ থাকলে মস্তিষ্কে একটি বার্তা যায়, যার ফলে আপনার দেহ ধীর গতিতে দুধ উৎপাদন করে।
তত্ত্ব: যদি বাচ্চা প্রচণ্ড কান্নাকাটি করে, তা হলে মা ঠিকমতো দুধ উৎপাদন করতে পারছে না।
তথ্য: আসলে বাচ্চারা বিভিন্ন কারণে কান্নাকাটি করে। তারা ভিজে যেতে পারে, তাদের ঠান্ডা অথবা গরম লাগতে পারে, কোনও শব্দ শুনে ভয় পেতে পারে। মূলত এই সব কারণে বাচ্চারা কাঁদে। অনেক সময় কোলে উঠতে চেয়েও কান্নাকাটি করে শিশুরা। প্রচণ্ড কাঁদছে মানে এই নয় যে, বাচ্চাকে স্তন্যপান করাতে হবে। আর এটা ভেবে নিলে বাচ্চার কান্নার আসল কারণটা চাপা পড়ে যাবে। তাই প্রথমেই তাদের অস্বস্তির কারণটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করতে হবে।