Are you worried about conceiving after cancer treatment? Fertility preservation can be a good option for those wanting to become a mother post-recovery.
Read more in Bengali
বিয়ের দু’বছর পেরিয়ে যেতেই সন্তান নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিল বছর তিরিশের রিমিতা (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু তার বছর পেরোলেও কনসিভ করতে পারল না সে। তখনই বুঝেছিল, বন্ধ্যত্বের সমস্যার সম্মুখীন সে। এক ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে জানতে পারল, ওর সন্দেহ ভুল নয়। ডাক্তারবাবুর পরামর্শে শুরু হল চিকিৎসাও। ঠিকঠাকই চলছিল সব কিছু। তবে মাস সাতেক পরেই দেখা দিল আর এক সমস্যা। কারণ কয়েক দিন ধরেই স্তনে একটি মাংস পিণ্ড অনুভব করছিল রিমিতা। চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায় সে। জানা যায়, স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত সে। অস্ত্রোপচারের পরে নিতে হবে কেমোথেরাপিও। এর পর থেকে নানা আশঙ্কা ঘুরপাক খেতে শুরু করে সদ্য বিবাহিতা ওই তরুণীর মনে। ক্যানসার চিকিৎসার পরে নিজে সুস্থ হলেও সন্তানধারণ কি করতে পারবে সে? এই আশঙ্কাটা দূর করলেন রিমিতার ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞই। তিনি জানালেন, উপায় আছে। ক্যানসার চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগে যদি রিমিতা ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখে, তা হলে নিজে সুস্থ হয়ে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারবে সে। পরে অবশ্য ক্যানসার জয় করে ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে রিমিতা।
বিয়ের বছর না ঘুরতেই যেন অন্ধকার নেমে এসেছিল বছর সাতাশের তথাগত আর ওর স্ত্রী ঋতজার জীবনে (নাম পরিবর্তিত)। বিয়ের ঠিক সাত মাসের মাথায় জানা যায়, তথাগত কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত। ডাক্তারবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, রোগটা প্রথম ধাপে রয়েছে বলে সুস্থ হয়ে যাবে তথাগত। তাতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে তার স্ত্রী ও পরিবারের লোকেরা। তবে চিকিৎসা শুরু করার আগে ডাক্তারবাবু জানিয়েছেন যে, তথাগত আর বাবা হতে পারবে না। তবে ও যদি কোনও ফার্টিলিটি ক্লিনিকে ওর শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখতে পারে, তা হলে তথাগত পিতৃত্বের স্বাদ পেতে পারে। তবে যা করার তা ক্যানসারের চিকিৎসা শুরুর আগেই করে ফেলতে হবে। অনেক ভেবে-চিন্তে রাজি হয়ে যায় ওই দম্পতি। এর পর তথাগত সুস্থ হয়ে যাওয়ার কয়েক বছর কাটলে ওরা সন্তান নেবে বলে ঠিক করে। তার পর কেটে গিয়েছে আরও কয়েক বছর। ওরা এখন এক সুস্থ কন্যা সন্তানের সুখী বাবা-মা।
নিশ্চয়ই ভাবছেন, কোনও রূপকথার গল্প পড়ছেন! একেবারেই না। রেশমি আর কৌশিকের গল্পটা রূপকথার মতো হলেও বাস্তব ঘটনা। শুধু এরাই দম্পতি নয়, আরও অনেক তরুণ-তরুণীও আছেন, যাঁরা ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে হারিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন এবং সুস্থ সন্তানেরও জন্ম দিচ্ছেন।
এক পরিসংখ্যান বলছে, স্তন এবং জরায়ুর ক্যানসারে অক্রান্তদের মধ্যে কম বয়সিদের সংখ্যা বাড়ছে। ভারতে প্রতি বছরই বাড়ছে স্তন ক্যানসার রোগীর সংখ্যা। তবে তাতে থেমে থাকছে না কিছু। চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত। তাই ক্যানসারের মতো ঘাতক রোগকে হারিয়ে অনেকেই মাতৃত্ব এবং পিতৃত্বের স্বাদ পাচ্ছেন। কী ভাবে। ক্যানসারের যে কোনও থেরাপিতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে আপনার সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা। তার জন্যই প্রয়োজন ফার্টিলিটি সংরক্ষণ। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এই ফার্টিলিটি সংরক্ষণ করা হয় মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট ধাপে।
বাবা–মা হওয়ার পথে ক্যানসার কী ভাবে বাধা হয়ে দাঁড়ায়:
কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার চিকিৎসা সন্তান উৎপাদন এবং সন্তান ধারণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যার প্রভাব অস্থায়ীও হতে পারে, আবার চিরস্থায়ীও হতে পারে। ক্যানসারের কোন স্টেজ অথবা কোন ধরনের ক্যানসার, তার উপরই নির্ভর করবে সন্তান উৎপাদন এবং সন্তান ধারণের বিষয়টা। এমনকী চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর বয়সের উপরেও ফার্টিলিটি অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ বার জেনে নেওয়া যাক ক্যানসার চিকিৎসা ও তার প্রভাব।
- অস্ত্রোপচার বা সার্জারি
সার্জারির মাধ্যমে পুরুষদের শুক্রাশয় এবং মহিলাদের জরায়ু (ইউটেরাস) অথবা ডিম্বাশয় (ওভারি) বাদ চলে যায়, সে ক্ষেত্রে ফার্টিলিটির উপর প্রভাব পড়বে।
- কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপির ড্রাগ ও মাত্রার উপর নির্ভর করে ওই প্রভাব। যে সব ড্রাগে অ্যালকাইলেটিং উপাদান থাকে, সেগুলোই বেশি ক্ষতি করে। এ ছাড়াও সিসপ্লাটিন ড্রাগও মারাত্মক ক্ষতি করে। তবে যাঁদের কেমোথেরাপি চলে, তাঁদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক মহিলারা বন্ধ্যত্বের সমস্যায় আক্রান্ত হন।
- রেডিয়েশন
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেমোথেরাপির তুলনায় রেডিয়েশনে বেশি ক্ষতি হয়। কোথায় ও কতটা জায়গা জুড়ে রেডিয়েশন করা হচ্ছে এবং রেডিয়েশনের মাত্রা- এ সবের উপর নির্ভর করে ক্ষতির পরিমাণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, উচ্চ মাত্রায় রেডিয়েশন চললে তা ডিম্বাশয়ের কিছু ডিম্বাণু নষ্ট করে দেয়। এমনকি অনেক সময় সব ডিম্বাণুও শেষ করে দিতে পারে।
- ক্যানসারের অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি
অনেক সময় কয়েক ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে হরমোনথেরাপি করা হয়। মহিলাদের স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যার প্রভাব ফার্টিলিটির উপর পড়তে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই ধরনের চিকিৎসা শেষ হলেই ফার্টিলিটি সংক্রান্ত সমস্যাও শেষ হয়ে যায়।
ক্যানসার চিকিৎসা শুরুর আগে মহিলাদের ফার্টিলিটি সংরক্ষণ:
মহিলাদের ক্ষেত্রে এমন সুযোগ অনেকটাই বেশি। জেনে নেওয়া যাক, মহিলাদের ক্ষেত্রে ফার্টিলিটি সংরক্ষণের দিকগুলি।
- এমব্রায়ো ক্রায়োপ্রিজারভেশন
এ ক্ষেত্রে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা নিষিক্ত করা হয়। তাতে যে ভ্রূণটা তৈরি হয়, সেটা ফ্রিজ করে সংরক্ষণ করা হয়। যাতে ক্যানসার সেরে যাওয়ার পর ওই ভ্রূণ হবু মায়ের গর্ভে রোপণ করা যায়। গবেষণা বলছে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ভাবে ভ্রূণ সংরক্ষণ সফল হয়।
- ডিম্বাণু সংরক্ষণ
এ ক্ষেত্রে মহিলাদের অনিষিক্ত ডিম্বাণু সংগ্রহ করে তা নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
- রেডিয়েশন শিল্ডিং
এ ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় ঢাকা দিয়ে রাখা হয়। যাতে ডিম্বাশয়ের উপর রেডিয়েশনের প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো যায়।
- ওভারি বা ডিম্বাশয়ের জায়গা বদল
পেলভিক অংশে রেডিয়েশন দেওয়া হলে ওভারি বা ডিম্বাশয়ের জায়গা বদলে দেওয়া হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। ক্যানসারের চিকিৎসা শেষ হলে আবার সার্জারি করে ডিম্বাশয় ঠিক জায়গায় ফিরিয়ে এনে কনসিভ করা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সব সময় ওভারিকে রেডিয়েশনের হাত থেকে বাঁচানো যায় না।
- সার্ভিক্স বাদ দেওয়া
প্রথম স্টেজের সার্ভিক্যাল ক্যানসারের চিকিৎসায় সার্ভিক্সের ক্যানসার আক্রান্ত অংশের সঙ্গে বড় চোঙার মতো একটা অংশ বাদ দেওয়া হয়। তার পর সার্ভিক্স ও জরায়ুর বাকি অংশ সংরক্ষণ করা হয়।
ক্যানসার চিকিৎসা শুরুর আগে পুরুষদের ফার্টিলিটি সংরক্ষণ:
ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগে পুরুষরা যদি মনে করেন যে, ফার্টিলিটি সংরক্ষণ করবেন, তা হলে সেটা করতেই পারেন।
- স্পার্ম ক্রায়োপ্রিজারভেশন
এ ক্ষেত্রে স্পার্ম বা শুক্রাণু কোনও স্পার্ম ব্যাঙ্কে অথবা ফার্টিলিটি ক্লিনিকে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। যাতে সেটা পরে ব্যবহার করা যায়। ওই শুক্রাণু নিম্ন তাপমাত্রায় রাখা হয় এবং বছরের পর বছর ও ভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
- রেডিয়েশন শিল্ডিং
রেডিয়েশনের মারাত্মক প্রভাব যাতে জননাঙ্গে না পড়ে, তার জন্য শুক্রাশয় ঢাকনার মতো উপাদান দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
কখন এই বিষয়ে ভাববেন:
হয়তো আপনার ক্যানসার ধরা পড়েছে। আর তার চিকিৎসা শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি চান, নিজের ফার্টিলিটি প্রিজারভেশন বা ফার্টিলিটি সংরক্ষণ করবেন, তা হলে তা করতে পারবেন। এই বিষয়ে আপনাকে সাহায্য় করতে পারেন এক জন ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ। তিনি পুরোটা বুঝে আপনাকে পরীক্ষা করে সঠিক দিশা দেখাবেন এবং চিকিৎসা চলাকালীন তিনিই আপনাকে তার পরামর্শও নিতে হবে।